ব্যাংক খাতে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের তাগিদ

ব্যাংক খাতে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের তাগিদ

106 4

রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনায় দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ব্যাংকগুলো শতভাগ দেশীয় কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার (সিবিএস) ব্যবহার করছে।

সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে ‘ডোমেস্টিক কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার ব্যবহার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক এক্সচেঞ্জের অপচয় প্রতিরোধ’ শীর্ষক অনলাইন সভায় এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংক এখনো বিদেশি সফটওয়্যার ব‌্যবহার করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) মনে করে, দেশীয় সফটওয়‌্যার ব‌্যবহারে বৈদেশিক মুদা সাশ্রয় হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং দেশের আর্থিক ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সভায় স্থানীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক এবং বিডিবিএল ব‌্যাংককে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সভায় এ ছয় ব্যাংক স্থানীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করতে সম্মত হয়েছে। দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৮টি বর্তমানে দেশীয় সিবিএস ব্যবহার করছে। অভিযোগ আছে, রাষ্ট্রীয় কয়েকটি ব্যাংক বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করছে বা অর্থ পাচার করছে।’

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) মতে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ১০০ কোটি টাকার সফটওয়্যার উৎপাদন করে। বর্তমানে দেশীয় প্রতিষ্ঠান লিড করপোরেশন, ফ্লোরা সিস্টেমস, মিলেনিয়াম সফটওয়্যার, ইনফিনিটি সফটওয়্যার, সাউথটেক, আইআরএ ইনফোটেক ব্যাংকিং সফটওয়্যার তৈরি করছে।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো স্থানীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে সফটওয়্যারে হঠাৎ কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান পাওয়া সম্ভব। এছাড়া, এর সঙ্গে আর্থিক নিরাপত্তা ও বৈদেশিক মুদ্রার সম্পর্ক আছে।’

সফ্টওয়্যার ব্যবহার ব্যয়সাপেক্ষ। এই ব্যয় দুই ধরনের—লাইসেন্স এবং রক্ষণাবেক্ষণ। সোনালী ব্যাংক সোনালী ইন্টিলেক্ট লিমিটেড (এসআইএল) সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। সভায় সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এ পর্যন্ত লাইসেন্স ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১২৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। সোনালী ব্যাংক ৫১ শতাংশ মালিকানা রেখে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে একটি সহযোগী সংস্থা গঠনের ইচ্ছের কথা জানিয়েছে।

জনতা ব্যাংক জানায়, তারা সফটওয়্যারের জন্য ১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার ব্যয় করেছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৬১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসেবে)। ২০০৯ সালে ব্যাংকটি সুইস সংস্থা টেমেন্স থেকে টিটোভেনচার নামে সিবিএস কিনেছিল। ডেটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেড স্থানীয় সমস্যা সমাধান করছে। এই ব্যাংকটি দেশীয় সিবিএসের জন্য একটি সহযোগী সংস্থাও গঠন করেছিল।

অগ্রণী ব্যাংকও ২০০৬ সালে টেমেন্সের কাছ থেকে লাইসেন্স পেয়েছিল। তারা এটা ২০১৬-২০২৬ সাল মেয়াদের জন‌্য নবায়ন করেছে। তারা সফটওয়্যার লাইসেন্সের জন্য ১৬৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব‌্যয় করেছে। তাদের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা এ খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

রূপালী ব্যাংকও সোনালী ইন্টিলেক্ট সিবিএস ব্যবহার করছে। ব্যাংকটির ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ব্যাংকটি চায়, এ সেবার ধরন অভিন্ন থাক। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সিবিএস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

বেসিক ব্যাংক শতভাগ ভারতীয় মালিকানাধীন সংস্থা ট্রি আইস ইনফোটেক লিমিটেডের কাছ থেকে সিবিএস কিনেছে। ব্যাংকটি এ পর্যন্ত ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এটি ১৫০টি শাখায় সরবরাহ করা হয়েছে। লাইসেন্স এমনভাবে নেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিবছর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃনবায়ন হবে।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) সিবিএস আইস্টল কেনার জন্য ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। ব্যাংক এস্টেলার নামে স্থানীয় সিবিএস ব্যবহার করছে তারা। এটি ইআরএ ইনফোটেক লিমিটেড থেকে ২০১৫ সালে কেনা হয়।

বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, ব‌্যাংকে দেশীয় সফ্টওয়্যার ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। বর্তমানে দেশের ২৬টি ব্যাংক স্থানীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এটি অবশ্যই উৎসাহজনক। বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারের সবচেয়ে বড় বিপদ ডেটা পাচারের ঝুঁকি। সব সময় এ আশঙ্কা থাকে যে, কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে তথ্য চুরি করতে পারে।’

Please Share This Post in Your Social Media

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Rayhan